রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
দিদার এলাহী সাজু, নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাম বাংলার প্রচলিত প্রবাদ ‘দয়ায় আপদ বাড়ে।’ বাক্যটি শতভাগ সত্যে পরিণত হয়েছে নুরচাঁন বেগম নামে নিঃসন্তান, অসহায় এক বৃদ্ধার জীবনে। পালক মেয়ে ও জামাতার নির্মম নিষ্ঠুরতায় বসতভিটা হারিয়ে খোলাকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি। তার বুকফাঁটা কান্নায় ভারি হচ্ছে এলাকার নির্মল বাতাস।
জানা যায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাদেশ্বর গ্রামের গেদু মিয়ার স্ত্রী নুরচাঁন বেগম একজন নিঃসন্তান মহিলা। তিনি প্রায় ৩০ বছর পূর্বে মাহমুদা বেগম নামে এক শিশু কন্যাকে পালক (পোষ্য) হিসেবে নিজের ঘরে আশ্রয় দেন। এরপর থেকে তিনি মাহমুদাকে নিজের সন্তান মনে করেই লালন-পালন করতে থাকেন। প্রায় ১৫ বছর পূর্বে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে মাহমুদাকে বিয়ে দেন পার্শ্ববর্তী নিজগাঁও গ্রামের মৃত নুর উল্লার পুত্র ফয়সল মিয়ার নিকট। কিন্তু বিয়ের পর থেকে নানান অযুহাতে যৌতুক দাবি করতে থাকে ফয়সল। চাহিদামত যৌতুকের টাকা না দিলে মাহমুদার উপর নির্যাতন চালাতো সে।
এ অবস্থায় প্রায়ই নুরচাঁনের বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করত মাহমুদা। পোষ্য হলেও মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে বিয়ের পরেও দুই দফায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন নুরচাঁন। এরই মাঝে মৃত্যুবরণ করেন নুরচাঁনের স্বামী গেদু মিয়া। এ সুযোগে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে নিজেদের বাড়ির পাশে বাড়ি বানানোর পরামর্শ দেয় পোষ্যকন্যা মাহমুদা ও তার স্বামী ফয়সল। সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে যান নিঃসন্তান নুরচাঁন। তিনি তার স্বামীর বসতভিটা, পাকাঘর, আসবাবপত্র ও গরু-ছাগল বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা জমা করেন। এরপর পোষ্যকন্যা মাহমুদা ও তার স্বামী ফয়সলের কথামত জীবনের সঞ্চিত সকল সহায়-সম্বল দিয়ে নিজগাঁও গ্রামে তিন শতক ভুমি ক্রয় করে এতে পাঁকা বসতঘর নির্মাণ করেন তিনি। কিন্তু কয়েকবছর যেতে না যেতেই নানান অযুহাতে নুরচাঁনকে গালমন্দ ও মারধোর করতে শুরু করে জামাতা ফয়সল ও পোষ্যকন্যা মাহমুদা।
এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক মাস পূর্বে তাকে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয় জামাতা ফয়সল। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন নির্যাতনের নাটক সাজিয়ে স্বামীকে দিয়ে যৌতুকের টাকা আদায় ও ভিটেবাড়ি দখলসহ সকল ষড়যন্ত্রে পোষ্যকন্যা মাহমুদারও হাত রয়েছে। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুরুব্বিদের দ্বারস্থ হন। মুরুব্বিরা একাধিকবার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও ফয়সলের বেপরোয়া ও উশৃঙ্খল আচরণের কারণে কোন সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় উপায়ন্তর না দেখে বাহুবল মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নুরচাঁন। বর্তমানে জীবন সায়াহ্নে খেয়ে না খেয়ে তিনি কখনো ‘এরবাড়ি, কখনো ওরবাড়ি, কখনোবা খোলাকাশের নিচে’ দিনাতিপাত করছেন।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে ষাটোর্ধ্ব নুরচাঁন বেগম বলেন, ‘মাইনষে কয় দয়ায় আপদ বাড়ে। যারে আমি নিজের বাইচ্চার মত মানুষ করছি, বিয়া দিছি। সে-অই অখন আমার সব কাইড়া নিছে। আমি অখন মাইনষের দুয়ার-দুয়ার চাইয়া-চিত্তা খাই।’
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগতরাতে মোবাইল ফোনে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ দায়ের হয়েছে কিনা বিষয়টি এ মূহুর্তে আমার মনে পরছে না। এরকম কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’